kolkata pasa marar golpo চটি উপন্যাস সেক্স পিয়াসি part 7

kolkata pasa marar golpo বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে অনেক রাত হয়ে যায়। রিশুর ছুটি নেই, পরের দিনেই ওকে ফিরে যেতে হবে দিল্লী তাই সে রাতেই নব বিবাহিত দম্পতিকে নিয়ে

আম্বালিকা ফিরে আসে নিজের বাড়িতে। গাড়িতে সারাটা রাস্তা মাথা নিচু করে চুপচাপ রিশুর পাশে বসেছিল ঝিনুক। মাঝে মাঝে

তাকিয়ে দেখে পাশে বসা মেয়েটার দিকে যার সাথে এই মাত্র ওর বিয়ে হয়ে গেল। মা যার ছবি ওকে দেখিয়েছিল তার সাথে পাশে বসা মেয়েটার মধ্যে কোন মিল খুঁজে পায় না।

কেমন যেন ভাবলেশ হীন চোখের চাহনি ঝিনুকের, যেন কোন সম্মোহনের বশে কাঁচের পুতুলের মতন নড়াচড়া করে চলেছে। গলা খ্যাঁকরে জানান দেয়

নিজের উপস্থিতি, ঝাপসা দৃষ্টি নিয়ে তাকায় ঝিনুক রিশুর দিকে। বেদনা কাতর চাহিনি দেখে আর কিছু বলতে পারে না রিশু, বুঝতে পারে ঝিনুকের কষ্ট। kolkata pasa marar golpo

গাড়িতে ওরা দুজন ছাড়াও সামনের সিটে দিয়া বসে, ঝিনুকের পাশে ওর বোন ঝিলিক বসে তাই চুপ করেই থাকে রিশু।

নব দম্পতিকে বরন করে নতুন জীবনের আশীর্বাদ করে আম্বালিকা আর নিলাদ্রী।রিশুর ঘরে ঢুকে চারপাশে তাকিয়ে দেখে ঝিনুক। kolkata pasa marar golpo

ওদের ফ্লাটের চেয়ে অনেক বড় এই বাড়িটা। মায়ের মুখে শুনেছে যে আম্বালকা আন্টির বাবা নাকি খুব নাম করা একজন ডাক্তার ছিলেন।

রিশুর থাকার ঘরটা ওর ঘরের চেয়ে অনেক বড়, এক পাশে ধবধবে সাদা বিছানা, এক পাশের দেয়াল জুড়ে বড় একটা কাঁচের জানালা,

সেই জালানার পাশে একটা পড়ার টেবিল, একটা চেয়ার, সেই সাথে বিছানার পাশে একটা কাউচ রাখা। ঘরে ঢোকার আগেই ওর সুটকেস দুটো কোন কাজের লোক এই ঘরে এনে রেখে দিয়েছিল।

সারাদিন ঘুম হয়নি ওর তার ওপরে মানসিক অবস্থা ভালো নয়, খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে। যে সুটকেসে ওর সাধারন দৈনন্দিনের জিনিসপত্র ছিল

সেটা হাতে নিয়ে বিছানার ওপরে রাখার সময়ে বুঝতে পারে যে দরজায় কেউ একজন দাঁড়িয়ে। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে যে যার সাথে একটু আগে বিয়ে হয়েছে

সেই রিশু দরজার পর্দা সরিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেছে। ধুক করে এক লহমার জন্য ওর হৃদপিণ্ড গলার কাছে এসে আটকে যায়। kolkata pasa marar golpo

এত কিছু হয়ে গেল কিন্তু কেউই এক বারের জন্য মুখ খোলেনি। যেন কারুর কিছুই বলার নেই কারুর কাছে।

রিশু বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে ঝিনুকের দিকে। লাল বেনারসি পরিহিত, কপাল জুড়ে এখন লাল সিঁদুর মাখা, গালে নাকের ওপরেও লাল সিঁদুরের ছোপ ছোপ দাগ।

কি ভাবছে ঝিনুক? লাজুক স্বভাবের কোনদিন নয় রিশু যে মেয়েদের সাথে কথা বলতে দ্বিধা বোধ করবে, কিন্তু এই মেয়েটার দিকে তাকাতেই

কেমন যেন সব গুলিয়ে আসে ওর মাথার মধ্যে। ঝিনুক একা একাই সুটকেস খুলতে চেষ্টা করাতে এগিয়ে যায় রিশু।রিশু এগিয়ে এসে বলে, দাঁড়াও আমি খুলে দিচ্ছি।

চুপচাপ সুটকেসের পাশ থেকে সরে দাঁড়ায় ঝিনুক। এটা ওর সাথে দ্বিতীয় বার কথা বলেছে।সুটকেস খুলে দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে রিশু,

যে অয়েন্মেন্টটা বলেছিলাম সেটা লাগিয়েছিলে?মাথা দোলায় ঝিনুক, হ্যাঁ, এনেছিল এবং সেটা নিয়ম মতন লাগিয়েছিল আঁচড়ের দাগের ওপরে।

ছেলেটার গলার আওয়াজ বেশ রাশভারী, ভীষণ ভাবেই কাছে ডাকে, দূরে সরে থাকতে চাইলেও যেন দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব নয়। kolkata pasa marar golpo

রিশু ওকে বাথরুম দেখিয়ে দিয়ে বলে, যাও, আগে ফ্রেশ হয়ে নাও।সুটকেস থেকে রাতে পড়ার একটা নতুন কেনা মাক্সি আর তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পরে ঝিনুক।

বাথরুমটা বেশ বড়, এক পাশে একটা বড় বাথটাব। গিজার চালিয়ে গরম জল করে এক এক করে নিজের সাজ খুলে ফেলে, সাবান দিয়ে মুখ হাত ধুয়ে নেয়। ma masike choda

কপালের সিঁদুর ধুতে গিয়ে হটাত করেই কেমন যেন বাঁধা পরে যায় ওর মন, না এটা এমন থাকুক, হয়ত এটাই নিয়তি। আয়নায় নিজের গালের দিকে দেখে,

এতক্ষন সাজের পেছনে লুকিয়ে ছিল দাগ গুলো, মেকআপ ধুয়ে যেতেই সেই অস্পষ্ট দাগ বেড়িয়ে পরে।

গালের দাগ এখন একটু আছে তবে হাতের আঁচড়ের দাগ তেমন আর নেই। মাক্সিটা পরে গায়ে তোয়ালে জড়িয়ে

পরনের ভারী বেনারসি আর বাকি কাপড় হাতে বেড়িয়ে আসে বাথরুম থেকে। বেড়িয়ে এসে দেখে রিশু হাতে নিজের জামা কাপড় নিয়ে বাথরুম খালি হওয়ার অপেক্ষায়।

রিশু নিজের আলমারি খুলে একটা ঢিলে প্যান্ট আর একটা টি শারট বের করে নেয় পড়ার জন্য। বাথরুমের ভেতর প্রথমে কোন আওয়াজ না পেয়ে

একটু ভাবনায় পরে যায়। ঝিনুক সকাল থেকে কিছুই খায়নি, খেয়েছে সেই রাতে বিয়ে শেষ হওয়ার পরে তাও আবার খুব অল্প। প্রেসার লো হয়ে মাথা ঘুরে পরে গেল না

ত বাথরুমের মধ্যে? দেরি দেখে দরজায় একবার টোকা দেওয়ার কথা ভাবে, তারপরে ভাবে না, এটা ঠিক হবে না, মেয়েদের সাধারণত দেরি হয়।

তারপরে যখন জলের আওয়াজ পায় তখন ধড়ে প্রান ফিরে পায়, না ঠিক আছে ঝিনুক। এক ধাক্কায় এতবড় একটা দায়িত্ব ওর ওপরে এসে পড়েছে,

সেই সাথে ভীতি ওর বুকের মাঝে ছায়া ফেলে, মানিয়ে নিতে পারবে ত? এরপর একে নিয়ে দিল্লী ফিরে যেতে হবে, জানা হয়নি ঝিনুকের পছন্দ অপছন্দ,

আসলে চেনেই না যার সাথে হটাত করে বিয়ে হয়ে গেল। বাথরুম থেকে ঝিনুক বেড়িয়ে আসতেই ওর চোখ আটকা পরে যায় ঝিনুকের মুখের দিকে।

এতক্ষন মেকি সাজের নিচে লুকিয়ে থাকা মেয়েটার আসল সৌন্দর্য বেড়িয়ে এসেছে। পানপাতার মতন মুখ বয়াব, টানাটানা ভাসা ভাসা দুই চোখ,

ওর দিকে তাকিয়ে যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। গালের দিকে চোখ যায় ওর, এখন আঁচড়ের দাগ মিলিয়ে যায়নি।

কপাল নাক জুড়ে তখন সিঁদুরে মাখামাখি দেখে মনে মনে হেসে ফেলে রিশু। রিশুর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায় ঝিনুক। kolkata pasa marar golpo

রিশু ঢুকে পরে বাথরুমের মধ্যে। ধুতি পাঞ্জাবী খুলে, হাত মুখ ধুয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে দেখে ঝিনুক আলো নিভিয়ে ওর বিছানার ওপরে এক

কোনায় চুপচাপ হাঁটু মুড়ে মাথা নিচু করে কুঁকড়ে বসে। রিশু ঘরের ডিম লাইট জ্বালিয়ে দেয়, হাল্কা নীল আলোয় ভরে ওঠে ঘর। দরজা বন্ধ করে দেয় রিশু,

দরজা বন্ধের আওয়াজে কেঁপে ওঠে ঝিনুক, ভাসা ভাসা চোখে ওর দিকে দেখে। কি করতে চলেছে এবারে, এবারে কি ঝাঁপিয়ে পড়বে নাকি ওর ওপরে?

হাল্কা নীলাভ আলোয় রিশু পরিস্কার দেখতে পায় যে ঠান্ডার জন্য হোক কি কোন অজানা আশঙ্কায় ঝিনুকের কমনীয় শরীরে কাঁপন ধরেছে।

বিছানার দিকে এগিয়ে যায় রিশু। ওকে এইভাবে এগিয়ে আসতে দেখে ঝিনুক আরও কুঁকড়ে যায়। ঝিনুকের এই ভাবে কুঁকড়ে যাওয়ায় রিশু খুব ব্যাথা পায়, এইভাবে কাউকে ব্যাথা দিতে কোনদিন চায়নি।

ঝিনুকের দিকে দেখে নরম গলায় বলে, ঝিনুক যে অবস্থায় আমাদের…কথাটা শেষ করতে দেয় না ঝিনুক, ভগ্ন হৃদয়ে চাপা কন্ঠে চেঁচিয়ে ওঠে,

আমাদের বিয়ে হয়েছে বলে আপনি আমাকে কিনে নেন নি।সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর মুখে আপনি সম্বোধন শুনে হেসে ফেলে রিশু,

এখন আপনি ধরেই বসে আছো? ঝিনুক চোয়াল চেপে ওর দিকে রক্ত চক্ষু হেনে তাকিয়ে তখন। রিশু নরম গলায় বলে, আমি জানি তোমার মনের অবস্থা।

ঝিনুক ঝাঁঝিয়ে ওঠে, না, আপনি কিছুই জানেন না। আমার দিকে এক পাও এগোবেন না।হাত তুলে শান্ত ঝিনুককে শান্ত করিয়ে বলে,

প্লিজ এত ফরমালিটি কর না, আপনি নয় তুমি করেই বল। আমরা সত্য যুগে বসবাস করছি না। ঝিনুক হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারে না।

নরম গলায় ঝিনুকের রাগ প্রশমিত করার জন্য বলে, এত রাতে এইভাবে চেঁচাতে নেই। বাইরে মা পাপা আমার ভাই বোন তোমার বোন সবাই আছে।

ঝিনুক নিজের ভুল বুঝতে পেরে চুপ করে যায়। মাথা নাড়ায় রিশু, না সত্যিই আমি কিছুই জানি না।কথা বাড়ায় না ঝিনুক, লেপটা গায়ের ওপরে টেনে নিয়ে

এক কোনায় কুঁকড়ে শুয়ে পরে। বিছানার পাশের কাউচে চুপচাপ বসে পরে রিশু, ওর দিকে পেছন করে ঝিনুক শুয়ে। হাল্কা নীলাভ আলোয়

পরিষ্কার বুঝতে পারে যে শায়িত ঝিনুকের দেহ থেকে থেকে ফুলে ফুলে উঠছে, চাপা কান্নার আওয়াজ ওর কানে ভেসে আসে।

আলমারি খুলে একটা মোটা শাল গায়ে জড়িয়ে চুপ করে সারা রাত কাউচে বসে কাটিয়ে দেয় রিশু। চোখের দৃষ্টি সাদা বিছানায় শায়িত ক্রন্দনরত ললনার দিকে নিবদ্ধ।

এক দুশ্চিন্তায় ডুবে যায় ওর মন, যে মেয়ে বাবা মাকে অমান্য করতে পারে সে অনায়াসে ওর বাড়ির লোককে অমান্য করবে। kolkata pasa marar golpo

মায়ের ছোট বেলার বান্ধবী তার বড় মেয়ে তাও মনের কোনায় এক বড় কিন্তু জাগে ওর। এর আগেও একজনের ওপরে বিশ্বাস করেছিল,

কিন্তু সেই তৃতীয় ব্যাক্তি মায়ের মাতৃস্নেহ সঠিক অর্থে অনুধাবন করতে পারেনি।ঝিনুক বদরাগী জেদি মেয়ে একদম ওর স্বভাব বিরুদ্ধ।

বাবা মায়ের কথা অমান্য করে কেউ যদি বারেবারে আত্মহত্যার ভয় দেখায় সেই মেয়েকে জীবন সঙ্গিনী করা ভীষণ বিপদ। নিজেকেই প্রশ্ন করে রিশু,

মা কি শুধু মাত্র বান্ধবীর মুখের দিকে চেয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে? একবারের জন্য মনে হয়েছিল যে বলে, মা মেয়েটা খুব বদরাগী আর জেদি,

মনে হয় একে ওদের মাঝে এনে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু মায়ের চোখে তখন মহামায়ার রূপ, কি করে একটা ভেসে যাওয়া মেয়েকে বাঁচাবে সেটাই চিন্তা

ঘোরাফেরা করছিল ওর মায়ের মাথায়। সহজ সরল রেখায় ওদের জীবন ধারা অগ্রসর হবে না সেটা সেই রাতেই অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিল রিশু।

কয়েক বছর আগের কথা মনে পরে যায়, বেশ কয়েকবার চন্দ্রিকার সাথে বাড়ি নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছিল, কয়েকবার বুঝাতে চেষ্টা করেছিল ওর সাথে ওর বাড়ির সম্পর্ক।

কিন্তু যা ভেঙ্গে গেছে সেটা শেষ পর্যন্ত জোড়া লাগাতে কোনদিন চেষ্টা করেনি রিশু, খানিকটা অহম ভাব জেগে উঠেছিল শেষের দিকে,

যার জন্য কোনদিন চন্দ্রিকাকে ক্ষমা করতে পারেনি রিশু। কিন্তু এখানে ঝিনুকের ওপরে সেই রাগ সেই ক্ষোভ দেখাতে পারবে না রিশু,

নিজের অহম ভাবটাকে ঢেকে রাখতে হবে শুধু মা আর দিয়ার মুখ চেয়ে।মা হয়ত কোনদিন চাইবে না ওর প্রিয় বান্ধবীর সাথে আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাক

অথবা এই দরজার বাইরে ওই ওর বোন আর বান্ধবী যে ভাবে হেসে খেলে বেড়াচ্ছে সেটাকেও ভেঙ্গে দিতে ওর মন চায় না। লেপের মুড়ি দেওয়া ঝিনুকের ঢেউ খেলানো

দেহ পল্লবের দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা তখন চাপা কান্নায় কেঁপে চলেছে। ভোরের দিকে তন্দ্রা ভাব এসে গেছিল রিশুর, দরজায় আলত ঠকঠকের আওয়াজ

পেয়েই সেই তন্দ্রা ভাব কেটে যায়। জানালায় দিয়ে নতুন ভোরের আলো ওর সাদা বিছানার ওপরে এসে পড়েছে। চোখ ডলে, চশমা পরে দেখে গলা পর্যন্ত লেপ জড়িয়ে বিছানায়

বসে ওর দিকে তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে তাকিয়ে ঝিনুক। ভুরু নাচিয়ে প্রশ্ন করে ঝিনুককে, কি হয়েছে?ঝিনুক মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়, কিছু না।

সারা রাত কাঁদার ফলে ওর চোখ জোড়া ফুলে উঠেছে, কিন্তু স্বান্তনার সঠিক ভাষা খুঁজে পায় না। কাকে দেবে স্বান্তনা, নিজেকে না বিছানায় বসা মেয়েটাকে। kolkata pasa marar golpo

দরজা খুলতে যাওয়ার আগে, ঝিনুকের দিকে গায়ের শাল এগিয়ে দিয়ে বলে, এটা গায়ে দাও না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে। এখন উঠে পর, ব্রাশ করে মুখ ধুয়ে নাও।

কথা বাড়ায় না ঝিনুক। সারা রাত জেগেছিল, লেপের তলায় অন্য পাশে মুখ ফিরিয়ে শুয়েও ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানে বিছানার পাশের কাউচে বসে সারা রাত

ওর দিকেই তাকিয়েছিল রিশু। ওর হাত থেকে শাল নিয়ে, সুটকেস খুলে ব্রাস বের করে বাথরুমে ঢুকে পরে ঝিনুক। রিশু আড়ামোড়া ভেঙ্গে,

ঘুম থেকে ওঠার ভান দেখিয়ে দরজা খুলে দেখে দিয়া আর ঝিলিক একটা ট্রে তে চা নিয়ে দাঁড়িয়ে।দিয়া দাদার মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেলে,

কি দাদা ভাই, ঘুম হয়েছে?ঝিলিকের ঠোঁটে দুষ্টুমি ভরা হাসি, বান্ধবীকে ঠেলে ইয়ারকি মেরে বলে, ধ্যাত তুই না, ঘুম কি আর হয়। দুইজনে সারা রাত প্রেমালাপ করেছে।

ওদের কথা শুনে হেসে ফেলে রিশু, তোরা দুটো না বড্ড শয়তান হয়ে গেছিস।ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে দুইজনে। ঝিলিক জিজ্ঞেস করে, দিদি কোথায়?

চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বাথরুম দেখিয়ে দিয়ে উত্তর দেয় রিশু, বাথরুমে।ঝিনুক বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এসে দেখে দিয়া আর ঝিলিক ওদের ঘরে উপস্থিত।

রিশু ঘাড় ঘুরিয়ে নতুন ভোরের সদ্য ফোটা ফুলের দিকে তাকিয়ে দেখে। কপালের সিঁদুর ধুয়ে ফেলেছে বইকি কিন্তু এখন যেন মাথার চুলে একটু লেগে রয়েছে।

শাল জড়িয়ে মুখে হাসি টেনে দিয়া আর ঝিলিকের দিকে তাকায় ঝিনুক। ভেতরে খানিক ইতস্তত ভাব, বুদ্ধিমতী ঝিনুক সেই ভাব

আড়াল করে রিশুর দিকে তোয়ালে এগিয়ে দিয়ে চোখের ইশারায় বাথরুমে ঢুকে যেতে বলে। এই টানাটানা চোখের হুকুম অমান্য করা ওর সাধ্যের বাইরে।

তোয়ালে নেওয়ার সময়ে দুইজনের আঙ্গুল ক্ষনিকের জন্য একে অপরের সাথে ছুঁয়ে যায়। জোর করে রিশুর হাতের মধ্যে তোয়ালে গুঁজে দিয়ে মিষ্টি হেসে দিয়া

আর ঝিলিককে নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। রাতের ওই ঝড়ের পরে ভোরের বেলায় ঝিনুকের ঠোঁটের হাসি দেখে বিভোর হয়ে যায় রিশু,

দরজা দিয়ে বেড়িয়ে না যাওয়া পর্যন্ত নিস্পলক ওর যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থাকে।। সকালের খাওয়া দাওয়ার পর থেকেই তোড়জোড় শুরু,

সন্ধ্যের ফ্লাইটে ফিরে যেতে হবে দিল্লী।ঝিনুকের বাবা মা কিছু পরে উপস্থিত হয়ে যায় আম্বালিকার বাড়িতে। জিনিস পত্র গুছাতেই সময় চলে যায় ওদের।

বড় বড় তিনটে সুটকেস ভর্তি জিনিস পত্র, একটা রিশুর দুটো ঝিনুকের। বারবার আম্বালিকা ঝিনুককে জানিয়ে দেয় যে দিল্লীতে প্রচন্ড ঠান্ডা,

যেন একটু সাবধানে থাকে। গত রাতের যে আড়ষ্ট ভাব ছিল সেটা মায়ের দেখা পেয়ে অনেকটাই কেটে যায় ঝিনুকের। যদিও ঠিক ভাবে এই সম্পর্ক মানতে নারাজ তাও

সবার মুখের দিকে চেয়ে ঠোঁটে হাসি মাখিয়ে থাকে। সারাদিনে হ্যাঁ, না, মাথা দোলান ছাড়া বিশেষ কোন কথা হয়না রিশুর সাথে। লাজুক নতুন বউয়ের

মতন ভাব দেখিয়ে এড়িয়ে গেছে রিশুকে। বিকেলের দিকেই সবাই রওনা হয় এয়ারপোরটের জন্য। সন্ধ্যের পরে ফ্লাইট, দিল্লী পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে যাবে,

বাড়ি পৌঁছাতে আরো অনেক রাত হবে। আম্বালিকা বারেবারে ওদের বলে ছিল যে এয়ারপোরটে যেন কিছু খেয়ে নেয়। বাধ্য ছেলে মেয়ের মতন মাথা দুলিয়ে সায় দেয় রিশু আর ঝিনুক।

জল ভরা চোখে সবাইকে বিদায় জানিয়ে এয়ারপোরটের কাঁচের দরজা দিয়ে ঢুকে পরে দুইজনে। আম্বালিকা আর পিয়ালী, দুই মা, ওদের দিকে জল ভরা চোখ নিয়ে বিদায় জানায়।

রিশু সারা দিনে ঠিক ভাবে চোখ ভরে দেখার অবকাশ পায়নি ঝিনুকের দিকে। সর্বদা ওকে ঘিরে কেউ না কেউ ছিল, বিয়ের পরের দিনেই এই ভাবে ফিরে যেতে হবে

বলে সবার খুব মন খারাপ, কিন্তু কিছু করার নেই, রিশু ডাক্তার কর্তব্য দায়িত্ব সবার আগে। এয়ারপোরটে ঢুকে লাগেজ চেক করানোর

সময়ে তাকিয়ে থাকে ঝিনুকের দিকে। যদিও ঝিনুকের পছন্দ অপছন্দ ওর জানা নেই তাও বেশ কয়েকটা দোকান ঘুরে একটা দামি তুঁতে রঙের সালোয়ার কামিজ কিনেছিল,

সেই সাথে গাড় নীল রঙের কলার দেওয়া লম্বা ওভারকোট। ঝিনুকের পরনে ওর দেওয়া সেই সালোয়ার কামিজ দেখে বেশ ভালো লাগে। kolkata pasa marar golpo

দুই কাজল টানা চোখের দিকে তাকায় রিশু, যেন ওকেই জিজ্ঞেস করছে, এত কি হা করে দেখছ? ঠোঁটে গাড় লাল রঙের লিপস্টিক,

মাথার চুল একপাশে করে আঁচড়ান, গাড় বাদামি রঙের চুল মাথার পেছনে বেশ সুন্দর করে বাঁধা, সাজতে জানে মেয়েটা তাহলে।

বাঁকা পাতলা ভুরুর মাঝে ছোট্ট লাল রঙের টিপ আর সিঁথিতে সিঁদুরের দাগ।ওভারকোটটার বেল্ট কোমরে বাঁধা থাকার ফলে কোমর বেশ পাতলা দেখায়,

দুই হাতে সোনার গয়না আর সদ্য বিবাহিতার নিদর্শন স্বরূপ সোনায় বাধানো শাঁখা পলা, লম্বা নখে লাল রঙের নেল পলিশ।

রিশুকে ওইভাবে তাকিয়ে থাকাতে দেখে ভীষণ বিব্রত বোধ করে ঝিনুক। বুকের ওপরে হাত ভাঁজ করে অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে থাকে।

অত কি ফ্যালফ্যাল করে দেখছে ছেলেটা, এর আগে কি মেয়ে দেখেনি নাকি। এতক্ষনে ঠিক ভাবে কথাও হয়নি, কথা বলার মতন মানসিকতা ছিল না একদম।

শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয়েই গেল আর এই মানুষটার সাথে কেমন নির্বিকার ভাবে চলেও যাচ্ছে দিল্লীতে।নিজের ওপর ভীষণ রাগ হয় ঝিনুকের,

তোর নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছে বলতে কি কিছু নেই নাকি যে চলে যাচ্ছিস? আপন মনে হটাত করেই মাথা নাড়ায়, না চলে যাওয়া ছাড়া ওর কাছে আর কোন উপায় নেই।

সিকিউরিটি চেকের আগে ওর হাতে বোরডিং পাস ধরাবার সময়ে আঙ্গুলের সাথে আঙ্গুলের ছোঁয়া লাগে। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের লাইন বেশ লম্বা,

ঝিনুকের তাড়াতাড়ি চেকিং হয়ে যায়। বেড়িয়ে এসে কোথাও রিশুকে দেখতে না পেয়ে ব্যাকুল হয়ে যায় ওর হৃদয়, নিজের অজান্তেই শুন্য হয়ে যায় মনের কানা গলি, গেল কোথায়?

এই ত দাঁড়িয়েছিল লাইনে। এদিকে ওদিকে তাকিয়েও খুঁজে পায় না। হাওয়ায় মিলিয়ে গেল নাকি?এমন সময়ে কাশির আওয়াজ শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে ওর পেছনে দাঁড়িয়ে।

খুব বলতে ইচ্ছে করছিল, কোথায় গেছিলেন, এতক্ষন লাগে নাকি? না বলতে পারেনি ঝিনুক কেমন যেন বাধো বাধো ঠেকেছিল তখন।

রিশু ইশারায় জানায় যে ফ্লাইটের আরো বেশ কিছু দেরি আছে। ঝিনুক ফোন করে মাকে জানিয়ে দেয় যে ওদের সিকিউরিটি চেক হয়ে গেছে,

দিল্লীতে পৌঁছে জানিয়ে দেবে। একটা চেয়ার খালি দেখে ঝিনুক কে বসতে অনুরোধ করে রিশু।অন্ধকার নেমে এসেছে বেশ আগেই, বড় কাঁচের জানালা

পাশে দাঁড়িয়ে রিশু, কাঁধে ওর ল্যাপটপের ব্যাগ। চেয়ারে বসে ফোন দেখতে দেখতে আড় চোখে রিশুর দিকে তাকিয়ে দেখে। পরনে একটা জিন্স আর শারট,

দেখে মনেই হয় না যে আগের দিন ওদের বিয়ে হয়েছে। ছেলেটাকে খুব সাধারন দেখতে কিন্তু কেমন যেন একটা আকর্ষণ আছে ওর

বুদ্ধিদীপ্ত চোখে আর গুরু গম্ভির আওয়াজে। এই কয়দিনে ঠিক ভাবে নিজের ফোন দেখতে পারেনি ঝিনুক, প্রচুর কল আর প্রচুর মেসেজ।

বন্ধু বান্ধবীরা যারা এসেছিল তাদের সবার প্রশ্ন, হটাত কি করে দিল্লীর এত বড় এক ডাক্তারের সাথে ওর বিয়ে হয়ে গেল। বসে বসে

ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রাম খুলে পার্থের সাথে যেকটা ছবি দেওয়া ছিল, সব সরিয়ে দেয়। ফেসবুকে, মোবাইলে প্রচুর মেসেজ কিন্তু কারুর মেসেজের উত্তর দেওয়ার মতন মানসিকতা ছিল না ওর।

কাঁচের জানালার অন্যপাশে ঘন অন্ধকার, সারি দিয়ে প্লেন দাঁড়িয়ে। কাঁচের জানালায় ঠিক পেছনে বসে থাকা ঝিনুকের প্রতিফলনের দিকে চোখ যায়,

মাথা নিচু করে বসে এক মনে ফোন দেখে চলেছে। আশে পাশে প্রচুর মানুষের ভিড়, যারা একা নয় তারা সবাই তাদের সাথের লোকের সাথে গল্প করছে। kolkata pasa marar golpo

এপাশে ওপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেশ কয়েকজন দম্পতি চোখে পরে, সবাই কেমন একে অপরকে জড়িয়ে ধড়ে আলাপে মশগুল। ওর সাথে ওর নতুন বিবাহিতা স্ত্রী তাও রিশু বড় একা।

ইন্দ্রজিত আর শালিনীকে বলেছিল সাথে আসতে, কিন্তু বিয়ের পরে নিলেশের সাথে ওদের বাড়ি চলে গেল তাই একা একাই ফিরতে হচ্ছে ওদের।

ইন্দ্রজিত থাকলে অন্তত ওর সাথে গল্প করতে পারত আর শালিনীকে পেয়ে ঝিনুকের একাকিত্ত্ব ভাব দূর হত। অনেকক্ষণ না খেয়ে রয়েছে হয়ত ওর খিধে পেয়েছে,

রিশুর অভ্যেস আছে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা, না খেয়ে থাকা।কোন কোন দিন টানা পাঁচ ছয় ঘন্টা অপারেশান থিয়েটারে কাটিয়ে যখন বের হয়

তখন আর খাওয়ার ইচ্ছে থাকে না। তাও একবার ঝিনুক কে জিজ্ঞেস করা উচিত কিছু খাবে কি না।দুপুরের পরে কিছুই খায়নি, জল পিপাসাও পেয়েছে,

কিছু বলতেও পারছে না ঝিনুক। গত রাতে যেভাবে গলা চড়িয়ে কথা বলেছে তারপর থেকে রিশু ওর সাথে ঠিক ভাবে কথা বলেনি।

অতি আবশ্যক না হলে একদম কথাই বলেনি বরং ওকে এড়িয়েই চলে গেছে। ঝিনুক মাথা নিচু করে ফোন দেখলেও ষষ্ট ইন্দ্রিয় সজাগ ছিল ওর।

পাশে ছায়া দেখতে পেয়ে মাথা উঁচু করতেই রিশুর সাথে চোখাচুখি হয়ে যায়।ভুরু কুঁচকে ঝিনুক ওর দিকে তাকায়, কি হয়েছে? না মুখে বলেনি ইশারায় কথা হয় ওদের।

রিশু জিজ্ঞেস করে,কিছু খাবে কি?নিজের ল্যাপটপের ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে উঠে দাঁড়ায় ঝিনুক, রিশুর চোখের দিকে তাকাতে গিয়েও চোখ নামিয়ে বলে,

একটু জল পেলে ভালো হত।ছোট্ট উত্তর দেয় রিশু, আচ্ছা।সামনের একটা দোকান থেকে জলের বোতল কিনে ওর হাতে ধরিয়ে জিজ্ঞেস করে,

আর কিছু চাই? ইঙ্কামিং ফ্লাইট এখন আসেনি তাই ফ্লাইট একটু লেট আছে।খিধে পেয়েছিল খুব, কিন্তু কিছুতেই মুখ ফুটে বলতে পারছে না।

জল খেয়ে এপাশ অপাশ তাকিয়ে দেখে, বেশ কয়েকটা ফুড স্টল রয়েছে। ঝিনুকের চোখ খাবারের স্টলের দিকে যেতেই মনে মনে হেসে ফেলে রিশু, পিজ্জা বারগার না দোসা?

এমনি বন্ধুদের সাথে হলে পিজ্জা না হয় বার্গার এইসব খেত কিন্তু রিশুকে কি বলবে? নিচু গলায় বলে, তুমি যা খেতে চাও। কিন্তু গলা থেকে স্বর বের হয়না ওর,

শুধু ঠোঁট কাঁপাটাই রিশুর চোখে পরে। শুনতে না পেয়ে ঝিনুকের দিকে একটু ঝুঁকে পরে রিশু, নাকে ভেসে আসে মাদকতাময় সুঘ্রাণ,

বুক ভরে শ্বাস নিয়ে সেই ঘ্রানে নিজের স্নায়ুকে তরতাজা করে নেয় রিশু। আবার জিজ্ঞেস করে, কি খাবে বল?

কানে কালা নাকি ছেলেটা, নাকি রিশু ইচ্ছে করেই ওর দিকে অমন ভাবে ঝুঁকে? কিঞ্চিত রেগে যায় ঝিনুক, ভুরু কুঁচকে বলে, না, খিধে নেই আমার।

মুচকি হাসে রিশু,লো কস্ট ফ্লাইট, খেতে দেবে না কিন্তু।হাসি পেয়ে গেছিল ঝিনুকের তাও ওর সামনে হাসতে খুব বাধো বাধো ঠেকছিল তাই গোমাড়া মুখ করে উত্তর দেয়, দোসা হলেই চলবে।

দুটো মসালা দোসা নিয়ে সামনা সামনি চেয়ারে বসে খেতে শুরু করে দুইজনে। দিল্লী পৌঁছাতে কত রাত হবে জানা নেই, এয়ারপোরট থেকে ওর বাড়ি কতদুর সেটাও জানে না,

শুধু জানে সিআর পার্ক এলাকায়। দিল্লীতে বেড়াতে এসেছে ঝিনুক কিন্তু সেটা অনেক ছোট বেলায়। গত রাতে পাশে আসেনি, সেটা ঠিক, কিন্তু দিল্লীতে কি করবে?

কটা ঘর ওর বাড়িতে, আলাদা শোয়ার ঘর আছে? মনের মধ্যে হাজার প্রশ্ন জেগে ওঠে ওর। যদি রিশু বিছানায় শোয় তাহলে ও মাটিতে শোবে।

যদিও ওদের ধর্ম সম্মত বিয়ে হয়েছে কিন্তু তাও এই ভাবে কোন অচেনা অজানা মানুষের কাছে নিজেকে সঁপে দিতে নারাজ। দেখে ত মনে হয় না যে রিশু

ওর প্রতি এতটা নিষ্ঠুর হবে। এখন এই প্রশ্নের উত্তর জানা হয়নি, কেন ওকে বিয়ে করেছে। বেশ শিক্ষিত এত বড় ডাক্তার, ইচ্ছে করলে ওর চেয়েও অনেক ভালো

মেয়েকে বিয়ে করতে পারত। প্রেমে ধাক্কা খেয়েছে বলে আর বিয়েই করল না? মায়ের মুখে শুনেছে, অম্বরীশ প্রচন্ড মাতৃ ভক্ত ছেলে, ভয় সেখানেই কথায় কথায় হয়ত এরপর মাকে টেনে আনবে।

এই সব মাতৃ ভক্ত অতি ভালো ছেলেদের দেখলেই গা পিত্তি জ্বলে যায়, কেমন যেন ভিজে বেড়াল মনে হয় ওদের। এতক্ষন সামনে বসে থাকলেও ভুলেও চোখ তুলে

তাকায়নি ওর দিকে, পাছে চোখাচুখি হয়ে যায় আর ওর মনের ভেতরের হাজার প্রশ্ন পড়ে ফেলে রিশু। তবে রিশুকে দেখে ভিজে বেড়াল বলে একদম মনে হয় না,

বরঞ্চ মনে হয় যেন পশুর রাজা সিংহ, শান্ত বুদ্ধিদীপ্ত, মার্জিত শিক্ষিত সেটা ওর চলনে বলনে চেহারায় ফুটে ওঠে।

গতরাতে ও যেমন ভাবে রিশুর ওপরে চেঁচিয়ে ছিল অন্য কোন ছেলে হলে সেই মুহূর্তে বাড়ির সবাইকে ডেকে একটা বিহিত করে দিত,

হয়ত ওকে টেনে এক থাপ্পড় মেরে চুপ করিয়ে দিত। সেই সব কিছুই করেনি, উলটে ওকে বুঝিয়ে চুপ করাতে চেষ্টা করেছে।

চুপ করে খেতে খেতে মাঝে মাঝে ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে দেখে। এত নিচু মাথা করে কি কেউ খায় নাকি? এরপর মনে হয় থালার মধ্যে ঢুকে পড়বে। kolkata pasa marar golpo

ঝিনুকের খাওয়া দেখে ভীষণ হাসি পায় রিশুর, ছোট এক টুকরো নিয়ে কত ভেবে তারপরে মুখের মধ্যে গ্রাস তুলছে। এত কি ভাবছে? কোথায় হারিয়ে গেছে মেয়েটা?

মায়ের মুখে অথবা পিয়ালী আন্টির মুখ থেকে যা শুনেছে তার কিছুই মিলছে না। শুনেছে এই মেয়ে নাকি প্রচন্ড কথা বলে, ভীষণ উচ্ছল আর প্রানবন্ত, কোথায় সেই সব?

একটা প্রেমে ধাক্কা খেয়েছে বলে এত মুষড়ে পড়েছে? একদম সঠিক সময়ে সেই ধূর্তের সত্য উন্মোচন হয়েছে বলেই বেঁচে গেছে না হলে সারা জীবন সেই ধূর্তের সাথে কাটাতে হত।

তাই বলে এই ভাবে মুষড়ে পড়বে নাকি? চন্দ্রিকা চলে যাওয়ার পরে মুষড়ে যদিও পরেনি তবে কারুর সাথে আর নতুন সম্পর্ক তৈরি করতে পারেনি।

মনে মনে হেসে ফেলে রিশু, রাতে যেভাবে আহত সাপের মতন ওর দিকে ফোঁস করে উঠেছিল তাতেই বোঝা গেছে যে এই মেয়ে ভাঙবে কিন্তু মচকাবে না।

ভাবনা চিন্তনের ধারা কেটে যায় রিশুর গলা শুনে, এত কি ভাবছ?সত্যি ধরা পরে গেছে, কান লাল হয়ে যায় ঝিনুকের। মাথা নাড়ায়, না কিছু না এমনি।

ওর দিকে তাকাতে ভীষণ বিব্রত বোধ করে। দোসা খাওয়া শেষ, অর্ধেক খেয়েই ওর পেট ভরে গেছে।রিশু ওর থালার দিকে দেখে বলে, এই টুকু, ব্যাস, আর খাবে না?

মাথা দোলায় ঝিনুক, না ব্যাস হয়ে গেছে।খাওয়া শেষে উঠে পরে দুইজনে। হাঁটতে হাঁটতে গেটের দিকে চলে যায়, হাঁটার সময়ে পাশাপাশি না হেঁটে একটু তফাতে

পেছনে পেছনে হেঁটে চলে ঝিনুক। ফোন করে বাড়িতে জানিয়ে দেয় যে ফ্লাইট লেট, ওদের দিল্লী পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে যাবে। যথারীতি,

ওর মায়ের সাথে রিশুও কথা বলে। তারপরে যখন রিশু নিজের বাড়িতে ফোন করে তখন ঝিনুক ও বেশ ভালো ভাবেই কথা বলে। শুধু মাত্র যখন

দুজনা অন্যজনের সাথে কথা বলে না তখন মনে হয় যেন দুইদিকে দুই তুষের আগুন জ্বলছে ধিকিধিকি করে।

বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পরে প্লেনের বোর্ডিং কল হয়। জানালার পাশে ঝিনুকের সিট তার পাশে রিশু। কিছু পরে লম্বা রানওয়ে ধরে

অন্ধকার চিড়ে ভীষণ জোরে দৌড়াতে শুরু করে প্লেন, ঝিনুকের বুক কেঁপে ওঠে, গত দশ বছর এই শহরে কাটিয়েছে। প্লেনটা মাটি ছাড়তেই চোখের কোনা ভিজে যায় ওর,

রুমাল বার করে রিশুর অলক্ষেই চোখের কোনা মুছে বাইরের দিকে তাকায়।আলো গুলো ধিরে ধিরে এক এক করে ছোট হয়ে আসছে, আর কি ফিরে আসা হবে এই মাটিতে

চোখ বন্ধ করে জানালার দিকে মুখ ফিরিয়ে হাতের মুঠো শক্ত করে নেয়, বুকের পাঁজর কেঁদে ওঠে, মা গো…রিশু ঘাড় ঘুরিয়ে ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে দেখে,

কাঁচের জানালায় মাথা রেখে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছে। এয়ারহস্টেসকে ডেকে একটা বালিশ চেয়ে আলতো করে ওর মাথা তুলে তার নিচে গুঁজে দেয়।

গায়ের ওভারকোটটা গলার কাছে ঠিক করে দেয়। নজর যায় ওর বন্ধ চোখের কোনায়, একটা সরু শুকনো জলের দাগ করুন হয়ে বয়ে নাকের ডগা পর্যন্ত চলে গেছে।

এত কষ্ট পাবে জানলে সত্যি বিয়ে করত না ঝিনুককে, কিন্তু সেদিন সবার সামনে তাহলে হ্যাঁ কেন বলেছিল, বলতে পারত যে একটু সময় চাই ভেবে দেখার জন্য,

রিশু কিছু একটা বলে তাহলে কাটিয়ে দিতে পারত। অন্তত ওর একবার উচিত ছিল বিয়ের আগে একবার ফোন করার, সেটাও করেনি, বাধো বাধো ঠেকেছিল, মনে হয়েছিল আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যাওয়া।

বুকের বামদিকের পাঁজর ককিয়ে ওঠে এক অজানা ব্যাথায়। এই দুষ্টু মিষ্টি মেয়েটার বুকের ঘা কি সত্যি শুকিয়ে দিতে পারবে রিশুর কোন ওষুধ?

শারীরিক ব্যাথা বেদনা, কাটা ছেঁড়া নিয়েই ওর নিত্য দিনের কাজ, শত শত রোগী আসে ওর কাছে তাদের অঙ্গ কেটে সেলাই করে সারাতে চেষ্টা করে রোজদিন।

কিন্তু এই মেয়েটার বুকের ক্ষতর ওষুধ ওর জানা নেই।পুরো ফ্লাইটেই ঝিনুক ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছিল। এর আগেও বহুবার বেড়াতে গিয়ে প্লেনে উঠেছে

তবে সেইবারের প্লেনে চাপা অন্যবারের চাইতে অনেক আলাদা। অন্যবার বোনের সাথে ঝগড়া হত কে জানালার পাশে বসবে,

এবারে অনায়াসে জানালার সিট পেয়ে যায়। প্লেন নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে। রিশু ঘুমন্ত ঝিনুকের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে,

সিটের ওপরের আলো কোমল গালের মোলায়ম ত্বকের ওপরে পিছলে যায়। ঝিনুকের দিকে একটু ঝুঁকতেই ওর মিষ্টি এক ঘ্রানে ওর শিরা উপশিরা টানটান হয়ে যায়।

ইচ্ছে করে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে গালের ওপরে জলের দাগ মুছে দেয়, কিন্তু কাজটা কি ঠিক হবে? গত রাতে একবার হাত ছুঁতে চেষ্টা করেছিল,

আহত সাপের মতন যেভাবে ফোঁস করছিল তাতে আর দ্বিতীয় বার ইচ্ছে হয়নি। ডান হাত মুঠো করে মুখের সামনে নিয়ে গিয়ে ওর কানের কাছে অল্প কাশে। kolkata pasa marar golpo

ঘুম জড়ান চোখ মেলে তাকায় ঝিনুক, কি হল?রিশু উত্তর দেয়, এই ত ব্যাস ল্যান্ড করবে।ঝিনুক রুমাল দিয়ে চোখ মুছে জিজ্ঞেস করে, আর কত দেরি লাগবে?

রিশু বলে, লাগেজ নিয়ে এখানে থেকে বের হতে ধর আরো এক ঘন্টা তারপরে ট্যাক্সিতে আরো এক ঘন্টা। ঘড়ি দেখে বলে, এখন সাড়ে ন’টা বাজে ত বাড়ি পৌঁছাতে

পৌঁছাতে ওই সাড়ে একগারটা বারোটার মতন বেজে যাবে।ওরে বাবা, এত দেরি। ঝিনুক ছোট উত্তর দেয়, আচ্ছা।রিশু জিজ্ঞেস করে, কোন ভারী জ্যাকেট এনেছ?

ভুরু কুঁচকে তাকায় ঝিনুক, কোন জ্যাকেট?মাথা নাড়ায় রিশু, আর কোন জ্যাকেট আনোনি?মাথা নাড়ায় ঝিনুক, হ্যাঁ এই এমনি বাড়িতে পড়ার অথবা এই বাইরে যাওয়ার কয়েকটা আছে।

হেসে ফেলে রিশু, ওই কোলকাতা মার্কা জ্যাকেটে কিন্তু এই রাতে কোন কাজে দেবে না। বাইরে কিন্ত এখন চার কি পাঁচ চলছে।

ভয় দেখাচ্ছে নাকি ওকে? এত ঠান্ডা নাকি এখানে? আম্বালিকা আন্টি আর দিয়া বলেছিল এখানে খুব ঠান্ডা কিন্তু জ্যাকেট কেনার কথা ওকে কেউ বলেনি,

আর সেই মানসিকতা ছিল না শপিং করার। প্লেন থেকে নামতে নামতে বেশ দেরি হয়ে যায়, বারবার ঘড়ি দেখে রিশু। প্লেন থেকে নেমে দুই বাড়িতেই জানিয়ে দেওয়া হয়

যে ঠিক ভাবেই ওরা দিল্লী পৌঁছে গেছে, এবারে লাগেজ নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দেবে। বাড়ির সাথে কথা বলার সময়ে বুদ্ধিমতী ঝিনুক আমূল পালটে যায়,

যেন বেশ ভালো আছে। ওর কন্ঠস্বর শুনে কারুর বোঝার উপায় নেই ওর মনের ব্যাথা। মনে মনে হেসে ফেলে রিশু, বেশ চালাক মেয়ে,

তাই’ত কলেজে কাউকে পাশে ঘেঁষতে দেয়নি। কিন্তু কি করে যে একটা অপদার্থের কবলে পড়ে গিয়েছিল কে জানে? মানুষ চিনতে সবার ভুল হয়,

ওর ও হয়েছিল, চন্দ্রিকার হয়ত কোনদিন ওর ওপরে তেমন বিশ্বাস জন্মায়নি তাই ওর আসল ঘটনা না জেনেই ওকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল।

ঝিলিকের সাথে কথা বলার পরে একটু ভালো লাগে ঝিনুকের। দেখতে দেখতে বোন কত বড় হয়ে গেছে, পার্থের সাথে সম্পর্ক চলাকালিন দুই বোনের সম্পর্কের মধ্যে একটা চিড় দেখা দিয়েছিল।

এক ধাক্কায় হারিয়ে যাওয়া বুকের কাছে সম্পর্ক গুলো আবার ফিরে পেয়েছে, পেয়েছে ওর ছোট বেলার খেলার সাথি ঝিলিককে, ফিরে পেয়েছে মাকে, ফিরে পেয়েছে বাবাকে।

এয়ারপোরটে সবার সাথে বাবাও ছাড়তে এসেছিলেন, সবার পেছনে দাঁড়িয়ে সবার অলক্ষে চোখের কোনা মুছে নিয়েছিলেন সেই দৃশ্য ওর চোখে ধরা পরে গিয়েছিল।

একটু ফ্রেশ হয়ে নিলে ভালো লাগত, ওদিকে রিশু যে হনহনিয়ে হেঁটে চলেছে। ওর সাথে তাল মিলিয়ে হাটা খুব মুশকিল, কি লম্বা লম্বা পা ফেলে রে বাবা ছেলেটা।

পেছন থেকে একটু জোরে ডাক দেয় রিশুকে, হ্যালো, এই যে… ঝিনুকের ডাক রিশুর কানে পৌঁছায় না কারণ ফোনে কারুর সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত।

একটু তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে রিশুর পাশে গিয়ে একটু জোরেই ডাক দেয়, হ্যালো… আমি একটু ওয়াশ রুম যাবো।

কান থেকে ফোন সরিয়ে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে এক পাশে ওয়াসরুম দেখিয়ে ঝিনুককে বলে রিশু, ওদিকে আছে, আমি লাগেজ বেল্টের কাছে থাকব।

মাথা দোলায় ঝিনুক। ওয়াশ রুমের দিকে এগোতে এগোতে একটা অজানা নাম্বার থেকে ফোন আসাতে বেশ অবাক হয়ে যায় ঝিনুক, সেই সাথে একটু ভয় পেয়ে যায়।

ঝিনুক জানত যে ওর বিয়েতে পার্থ নিজের গুপ্তচর লাগাবে, জানতে চাইবে কার সাথে বিয়ে হয়েছে কোথায় বিয়ে হয়েছে। সেদিন রাতে পার্থের ফোন ভেঙ্গে দিয়েছিল, এই নাম্বার পার্থের নয়ত?

ওর ছবি পার্থের মোবাইলে ছিল, সেই ছবি অন্য কাউকে দেখিয়েছে কি? যদি দেখিয়ে থাকে তাহলে অনেকের কাছেই ওর অর্ধ নগ্ন ছবি ছড়িয়ে গেছে ইতিমধ্যে।

এমন বহু প্রশ্ন মনের দোরগোড়ায় ভিড় করে আসে। শেষ পর্যন্ত দোনামনা করে ফোন উঠায় ঝিনুক, হ্যালো কে?অন্য পাশে এক রমণী বেশ উচ্ছল আওয়াজে প্রশ্ন করে, কে বলত?

তাহলে পার্থ করেনি ফোন, ভেবেই ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে ঝিনুকের, কিন্তু অন্যপাশের মেয়েটার গলা একদম চিনতে পারছে না তাই জিজ্ঞেস করে,ঠিক বুঝতে পারছি না।

খিলখিল করে হেসে ফেলে অন্যপাশের মেয়েটা, রিতিকা… মনে আছে কি?এত রাতে আচমকা রিতিকার ফোন আসাতে অবাক হয়ে যায় ঝিনুক,

কি ব্যাপার?হেসে ফেলে রিতিকা, বিয়ে করলি আর একবার ও বললি না?মাথা নাড়িয়ে হেসে ফেলে ঝিনুক, সব কিছু ঝড়ের মতন হয়ে গেছে

রে কাউকেই ঠিক করে নেমন্তন্ন করতে পারিনি।গলা নামিয়ে রিতিকা বলে, কৃষ্ণা আজ সকালে ফোন করেছিল ওর মুখ থেকে তোর কথা শুনলাম।

এমবিএ ব্যাচের সহপাঠিনী, রিতিকা পান্ডে, জামশেদপুরের মেয়ে, এমবিএ পড়ার সময়ে বিশেষ কথাবার্তা হত না ওদের মধ্যে কারণ দুই জনের মধ্যে একটা রেশারেশি ছিল কে বেশি সুন্দরী।

যদি ঝিনুক কোনদিন হাই হিল পরে কলেজ যেত তাহলে পরেরদিন থাই হাই বুটস পরে রিতিকা কলেজে আসত। যদি কেউ লেকমে লিপস্টিকের

একটা সেড কিনত পরের দিন অন্যজনে ম্যাবেলিনের অন্য শেড কিনত। কলেজে একটা বয় ফ্রেন্ড ছিল রিতিকার, হরিশ সিনহা নামের বিহারি ছেলে।

কলেজ ছাড়ার পরে কোনদিন ফোনে কথা হয়নি ওর সাথে। কৃষ্ণা ওর বান্ধবী, বিয়েতেও এসেছিল, এমবিএ করার পরে কোলকাতায় চাকরি পেয়ে যায় কৃষ্ণা। kolkata pasa marar golpo

কৃষ্ণার সাথে রিতিকার কথাবার্তা চলে সেটা ও জানত। কৃষ্ণা কি এমন বলেছে যে হটাত করে এত রাতে রিতিকার ওকে ফোন করতে গেল?

কৃষ্ণার ওপরে ভীষণ রাগ হচ্ছিল ঝিনুকের, মেয়েটার পেটে কোন কথা থাকে না। যার সাথে এতদিন কোন সুহৃদ সম্পর্ক ছিল না তাকে কেন ওর হাঁড়ির কথা জানাতে গেল?

রিতিকা ওকে বলে, আমিও দিল্লীতে জানিস। বলেই হেসে ফেলে খিলখিল করে।ওহ তাই ফোন করেছে, একটু হেসে অবাক ভাব দেখিয়ে ঝিনুক বলে,

ওহ আচ্ছা তাই নাকি? কথা বলার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে ছিল না ওর।রিতিকা ওকে জিজ্ঞেস করে, শুনলাম তোর হাবি (বর) নাকি এমেসের অরথপেডিক সার্জেন?

ছোট উত্তর দেয় ঝিনুক, হ্যাঁ।রিতিকা জিজ্ঞেস করে, দিল্লীতে কোথায় আছিস?সঠিক ঠিকানা জানে না ঝিনুক, তাও বলে, সি আর পার্কে।

রিতিকা অবাক হয়ে উত্তর দেয়, আরি ব্বাস, আমার অফিসের একদম কাছে রে। ঠিকানা দে কাল দেখা করব। তোর ডাক্তার কখন ফেরে হসপিটাল থেকে?

এই খবরটাও সঠিক জানা নেই ঝিনুকের তাও আন্দাজ করে উত্তর দেয়, সন্ধ্যের দিকে ফিরে আসেবে।ফিক করে হেসে ফেলে রিতিকা,

এবারে কিন্তু জমিয়ে ঠান্ডা পড়েছে, তবে তোর অসুবিধে হবে না। পুরো গরম থাকবি কি বল।কথাটা শুনে একটু লজ্জিত হয়ে কান লাল হয়ে যায় ঝিনুকের।

লাজুক হেসে উত্তর দেয়, জানি না রে এই ত ল্যান্ড করলাম, বাড়ি গিয়ে বোঝা যাবে।রিতিকা বলে, ওহ আচ্ছা, ঠিক আছে তাহলে কাল ফোন করব তোকে।

ঝিনুক যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে, হুম ঠিক আছে।রিতিকার ফোন রাখার পরেই কৃষ্ণাকে ফোন করে ঝিনুক, মেয়েটা কি বলতে না কি বলেছে সেটা একবার জানা দরকার।

এইভাবে বলে বেরালে বড্ড মুশকিলে পরে যাবে। কৃষ্ণা ফোন উঠাতেই ঝাঁঝিয়ে ওঠে ঝিনুক, তুই কি বলেছিস রিতিকাকে?

অন্যদিকে এত রাতে ফোন পেয়ে ঘাবড়ে যায় কৃষ্ণা, আমতা আমতা করে উত্তর দেয়, কই কিছু না ত? কেন কিছু হয়েছে নাকি?

দাঁতে দাঁত পিষে উত্তর দেয় ঝিনুক, এই একটু আগেই ফোন করেছিল। সত্যি করে বল কি বলেছিস?

কৃষ্ণা হেসে উত্তর দেয়, তুই একটুতেই এক্সসাইটেড হয়ে যাস, বড্ড হাইপার মেয়ে। ওকে শুধু এইটুকু বলা হয়েছে যে তোর বয়ফ্রেন্ড মানে পার্থ যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল

তার সাথে শেষ মুহূর্তে তুমুল ঝামেলা হয় যার জন্য তোর বিয়ে ভেঙ্গে যায়।মাথা নাড়ায় ঝিনুক, অবশ্য নিজে সবাইকে এই গল্প বলেছিল

তাই এর চেয়ে বেশি কারুর কাছে কোন খবর থাকার কথাও নয়। তাও জিজ্ঞেস করে, আর কি বলেছিস?

হেসে ফেলে কৃষ্ণা, আর কি বলব, বললাম যে দিল্লীর এক বড় হসপিটালের অরথপেডিক সারজেনের সাথে তোর সেই দিনেই বিয়ে হয়েছে।

সেই শুনে রিতিকার আর কি বলব, হারটফেল করার মতন অবস্থা। হিহি করে হেসে ফেলে কৃষ্ণা। তারপরে জিজ্ঞেস করে, তোরা ঠিক ভাবে পৌছালি?

মাথা দোলায় ঝিনুক, হ্যাঁ রে এই একটু আগেই ফ্লাইট থেকে নেমেছি।গলা নামিয়ে ওকে প্রবোধ দিয়ে বলে কৃষ্ণা, একটা সত্যি কথা বলব?

জানিস যা হয় ভালোর জন্য হয়। যা হয়েছে ভুলে যা, গুলি মার ওই বোকাচোদাকে, সব কিছু ঝেড়ে ফেলে নতুন শুরু কর। অম্বরীশের

ফ্যামিলিকে যেমন দেখলাম ওর বোন আর তোর বোন ত হরিহর আত্মা, কাকিমা ও দেখি তোর শ্বাশুরির সাথে বেশ মিশে গেছে।

হেসে ফেলে ঝিনুক, আরে আম্বালিকা আন্টি, মানে ওর মা আর আমার মা ছোট বেলার বান্ধবী, আবার সেই সাথে ঝিলিক আর দিয়া বেস্ট ফ্রেন্ড। kolkata pasa marar golpo

হেসে ফেলে কৃষ্ণা, তাহলে এত মুখ গোমড়া কেন তোর? কোন অচেনা বাড়িতে অথবা পরিবারে ত বিয়ে হয়নি। এত মনে হচ্ছে তুই এবাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে গেছিস।

হেসে ফেলে ঝিনুক, কথাটা মিথ্যে বলেনি কৃষ্ণা। আম্বালিকা আন্টি আর মায়ের মধ্যে এক অটুট বন্ধন যেটা প্রথম দিনে যখন বিয়ের নেমন্তন্ন করতে গিয়েছিল

তখন ওর চোখে পড়েছিল। সত্যি দেখতে গেলে পরিচয়ের বাইরের কাউকে বিয়ে করেনি ঝিনুক, হ্যাঁ এতদিন হয়ত দূরে থাকার জন্য সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল

কিন্তু দুই বাড়ির মা আর দুই বাড়ির বোনের মধ্যে এক নিবিড় সম্পর্ক সেটা সত্যি।যদি সত্যি বিয়ে হয়ে যেত পার্থের সাথে আর তারপরে ওর এই দুশ্চরিত্র ধরা পড়ত

তখন ওর করার কিছুই থাকত না, তার সাথে বাবা মায়ের বদনাম নিজের বদনাম হত।কৃষ্ণার সাথে কথা বলার পরে বেশ হাল্কা লাগে ঝিনুকের,

এই আসছি রে এরপর ক্যাব ধরব। আচ্ছা চল আবার পরে কথা হবে।এতক্ষন পরে একজন বান্ধবীর সাথে অনেকটা কথা বলার পরে মন একটু হাল্কা লাগে ঝিনুকের।

ফোন রাখার পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঠিক করে নেয়। টিসু এনেছিল সেটা দিয়ে চোখ গাল মুছে নিয়ে লাল রঙের লিপস্টিক বের করে আরো

একবার ঠোঁটের ওপরে বুলিয়ে নেয়। ব্যাগের ভেতরে লিপস্টিক রাখার সময়ে টাকার পার্স খুলে দেখে কত টাকা আছে। পার্স খুলতেই লম্বা সাদা

রঙের সিগারেটের প্যাকেটের দিকে নজর পড়তেই ধুক করে ওঠে ওর বুক।গত রাত থেকে এখন পর্যন্ত রিশুকে কোন সিগারেট খেতে দেখেনি,

মদ বা অন্য কিছুর নেশা করে কি না জানা নেই। বাড়িতে থাকলে লুকিয়ে চুরিয়ে দিনে একটা কি দুটো সিগারেট জ্বালিয়েই ফেলত কিন্তু সেটা এখন আর হবে না,

পার্থ অথবা বন্ধু বান্ধবীদের সাথে বসলে একটু আধটু ড্রিঙ্কস সেটাও প্রায় মাসে কয়েকবার হয়ে যেত। সিগারেট প্যাকেট দেখে ভীষণ বিব্রত বোধ করে ঝিনুক।

প্যাকেটটা হাতে নিয়ে দুমড়ে মুচড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে হাসে, এই পর্যন্ত তোর সাথে আমার ছিল সঙ্গ।

দুই কব্জির দিকে তাকায়, দুই হাতে সোনার পাতে বাঁধানো শাঁখা পলা, সেই সাথে সোনার পাতে জড়ান লোহা বাঁধানো, বাঙালি এয়োস্ত্রীর চিহ্ন।

আয়নার প্রতিফলনে কপালের দিকে চোখ যায় ওর, গাড় লাল রঙের হাইলাইটিং করা চুলের নিচে লুকিয়ে একটা পাতলা লাল রঙের সিঁদুরের দাগ।

হয়ত নতুন এক সূর্য দেখা দেবে আগামি কাল, নাকি কালো মেঘ উঠবে আকাশে?বেল্ট থেকে সুটকেস তিনটে নামিয়ে যেদিকে ঝিনুক গিয়েছিল

সেদিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করে। অনেকক্ষণ হয়ে গেল এখন আসছে না দেখে খানিক চিন্তিত হয়ে পরে। বিশাল এয়ারপোরট কোথাও আবার হারিয়ে গেল না ত?

মনে মনে হেসে ফেলে, এই সবের মধ্যে ওর ফোন নাম্বার নেওয়া হয়নি। নিজের স্ত্রী কিন্তু ফোন নাম্বার জানে না, কেউই যদি এটা শোনে তাহলে ভীষণ হাসাহাসি করবে।

ঘড়ি দেখে, পৌনে এগারোটা এখানেই বাজে, এরপর ট্যাক্সি করে বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে আরো রাত হয়ে যাবে।পোশাকের নিচে ইনার নিশ্চয় পরেনি ঝিনুক,

কোলকাতায় এসবের চল নেই, এয়ারপোরট থেকে বের হলে কনকনে ঠান্ডায় জমে যাবে তাহলে। নিজের সুটকেসে একটা শাল অবশ্য আছে,

একটু ভেবে সুটকেস খুলে সেই শাল বার করার সময়ে মনে হল ওর পাশে এসে কেউ দাঁড়িয়েছে। শাল বার করে উঠে দাঁড়িয়ে দেখে ওর পাশে ঝিনুক।

ওর হাতে শাল ধরিয়ে জিজ্ঞেস করে, এত দেরি করলে?নরম গলায় উত্তর দেয়, না মানে এক বান্ধবীর কল এসেছিল তাই কথা বলতে বলতে একটু দেরি হয়ে গেল।

মাথা দোলায় রিশু, ওহ আচ্ছা। ট্রলিতে সুটকেস গুলো নিয়ে বাইরের গেটের দিকে হাঁটা শুরু করে দুজনে।ঝিনুক একটু পেছনে ছিল,

হাতে শাল দেখে ভাবে হটাত শাল কেন বার করতে গেল? এখানে তেমন ঠান্ডা লাগছে না। জিজ্ঞেস করে রিশুকে, হটাত শাল কেন?

মুচকি হাসে রিশু, বাইরে কিন্তু বিশাল ঠান্ডা।মাথা দোলায় ঝিনুক, ওহ আচ্ছা।আবার দুইজনে চুপচাপ। টারমিনাল থেকে বেড়িয়ে আসতেই এক দমকা কনকনে ঠান্ডা হাওয়া

কাঁপুনি দিয়ে দেয় ঝিনুকের শারা শরীরে। দাঁতে দাঁত পিষে, বুকের ওপরে হাত শক্ত করে ভাঁজ করে গায়ের ওভারকোটটা শরীরের সাথে বেশি করে জড়িয়ে নেয়।

ওকে ওইভাবে কাঁপতে দেখে দাঁড়িয়ে পরে রিশু। হটাত থেমে যেতেই ভুরু কুঁচকে ওর দিকে তাকায় ঝিনুক। রিশু ওর হাত থেকে শাল নিয়ে গলায় জড়িয়ে গায়ে জড়িয়ে দেয়।

যখন ওর গায়ে শাল জড়িয়ে দিয়েছিল রিশু তখন ঝিনুকের সারা শরীর পাথর হয়ে গেছিল, ঠান্ডায় নয় এক অজানা অনুভুতিতে শরীরের সব রোমকূপ

একসাথে উন্মিলিত হয়ে ওঠে। গলায় শাল জড়ানোর সময়ে এক মুহূর্তের জন্য ওর কোমল উষ্ণ গালের ওপরে রিশুর তপ্ত কঠিন আঙ্গুল ছুঁয়ে যায়। kolkata pasa marar golpo

গালের ওপর হটাত ওই অচেনা আঙ্গুলের ছোঁয়ায় ভীষণ ভাবেই কেঁপে ওঠে ঝিনুক। আরো কিছুক্ষন এইভাবে ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে চেয়েছিল, কেন দাঁড়াতে চেয়েছিল?

কারণ ওর অজানা। নির্বিকার চিত্তে রিশু ওর গায়ে শাল জড়িয়ে দিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করে দেয় ট্যাক্সি স্টান্ডের দিকে। কিঞ্চিত অনুরাগ দেখা দেয়

ঝিনুকের বুকে, কৃষ্ণার সাথে কথা বলার পরে মন বেশ হাল্কা হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু রিশুকে নির্বিকার ভাবে আবার হাঁটতে দেখে মনে মনে বলে ফেলে,

ধ্যাত ছাতার মাথা, কতক্ষন পরে একটু কথা বলতে শুরু করেছিল আবার সেই চুপ।হাঁটতে হাঁটতে ট্যাক্সির স্টান্ডে গিয়ে ট্যাক্সিতে চাপে ওরা।

পেছনের সিটের দুই প্রান্তে দুইজন একাকী বসে, মাঝের ব্যাবধান যেন সহস্র যোজন। ফাঁকা রাস্তা দিয়ে হুহু করে গাড়ি এগিয়ে চলেছে,

এত রাতে রাস্তায় সাধারন গাড়ির সংখ্যা কম কিন্তু ট্রাকের ভিড় বেশ। নতুন জায়গা, নতুন রাস্তা, এমন কি আলো গুলো পর্যন্ত নতুন মনে হয় ঝিনুকের।

মন দিয়ে গাড়ির বাইরে দেখে আর ভাবে, এবারে এই শহর হয়ে যাবে ওর শহর।বাড়ি গিয়ে কি করবে ঝিনুক সেটাই চিন্তার প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়ায় রিশুর কাছে।

গতরাতে যেমন ভাবে আহত সাপের মতন ফোঁস করে উঠেছিল তাতেই বুঝে গিয়েছিল রিশু যে পাশে বসা আহত মেয়েটার বুকের ভেতরটা জোড়া লাগতে একটু সময় নেবে।

মনে মনেই হাসে রিশু, নাম ঝিনুক যখন তখন একদম খোলের মধ্যেই ঢুকে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। সেই খোল থেকে জোর করে বার করতে গেলে যদি খোল ভেঙ্গে যায়

তাহলে মুশকিল, হয়ত ঠিক সময় মতন নিজের খোল থেকে নিজেই বেড়িয়ে আসবে।ঘরের অবস্থা একদম তছনছ, আসার দিন ঘর গুছিয়ে রেখে আসার সময় পায়নি,

তখন কি আর জানত রিশু যে ওর সাথে এক সুন্দরী ওর ঘরের মধ্যে প্রবেশ করবে। সে যাই হোক যদি ওর মা, ভাই বোন এইভাবে থাকতে পারে

তাহলে এই পাশে বসা মেয়েটাকেও সেই ভাবেই থাকতে হবে। কিন্তু এত রাতে কি খাবে? এতক্ষনে ওর এলাকার সব রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে,

একমাত্র শহরের মাঝখানের বেশ কয়েকটা রেস্টুরেন্ট হয়ত খোলা থাকবে। কিন্তু ট্যাক্সি ওদের বাড়ির দিকেই ধেয়ে চলেছে।

বড় রাস্তা ছেড়ে বেশ কয়েকটা ছোট রাস্তার এমোড় সেমোড় বেঁকে একটা তিনতলা ফ্লাট বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় ওদের ট্যাক্সি।

রাত তখন সাড়ে বারোটা, সামনের পার্কের গাছাপালা গুলো যেন ভুতের মতন দাঁড়িয়ে। শীতকাল সবার বাড়িতে সেই সময়ে আলো বন্ধ, সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।

ট্যাক্সি থেকে নামতেই হুহু করে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া ঝিনুককে কাঁপিয়ে তোলে। বাপরে কি সাঙ্ঘাতিক ঠান্ডা। ভাড়া মিটিয়ে সুটকেস হাতে করে টানতে টানতে সিঁড়ির দিকে নিয়ে যায় রিশু।

পকেট থেকে বাড়ির চাবি বের করে ঝিনুকের হাতে ধরিয়ে বলে, দুইতলার ডান দিকের ফ্লাট, তুমি যাও আমি এই

সুটকেস গুলো এক এক করে নিয়ে আসছি।ঝিনুক নিজের বড় সুটকেসটা টেনে নিয়ে যেতেই রিশু বারন করে বলে, তুমি ছোটটা নিয়ে ওঠ আমি আসছি।

মাথা দোলায় ঝিনুক, আচ্ছা।একা একা এইভাবে কারুর বাড়িতে চাবি খুলে ঢুকে পড়তে একটু বিব্রত বোধ করে ঝিনুক। নিজের ছোট সুটকেস হাতে নিয়ে সিঁড়ির কয়েক ধাপ চড়ে

পেছন ঘুরে রিশুর দিকে তাকিয়ে থাকে। রিশু একটা বড় সুটকেস হাতে নিয়ে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে ঝিনুক ওর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে।

আধো আলো আধারিতে দাঁড়িয়ে এক স্বপ্ন দেশের রাজকুমারী বলে মনে হয় ঝিনুককে, উজ্জ্বল চোখ জোড়া চকচক করছে এক অজানা আশঙ্কা আর ভীতিতে।

মাথা নাড়িয়ে রিশু জিজ্ঞেস করে, কি হল চল। মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায় ঝিনুক, হ্যাঁ যাচ্ছি। এক পা এক পা করে চড়ার সময়ে অস্বাভাবিক নিস্তব্ধতার মাঝে

রিনিঝিনি করে বেজে ওঠে ওর পায়ের নুপুর। এতক্ষন চারপাশের কোলাহলে রিশুর কানে এই নুপুরের নিক্কন ঠিক ভাবে পৌঁছায়নি। ফর্সা পায়ের গোড়ালির দিকে

তাকিয়ে স্তব্দ হয়ে যায় রিশুর হৃদয়, দুই পায়ে পাতলা রুপোর নুপুর, এই আধুনিক যুগে নুপুরের চল একদম নেই তাই একটু অবাক লাগে ঝিনুকের পায়ে নুপুর দেখে।

দরজার তালা খুলে ভেতরে ঢুকে আলো জ্বালিয়ে দেয় রিশু। বসার ঘরের সোফায় একটা জামা আর জ্যাকেট পড়া, মাথা চুলকে সঙ্গে সঙ্গে সেই জামা

আর জ্যাকেট সরিয়ে দিয়ে মুখ কাচুমাচু করে হেসে ফেলে।একটা ঘরের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে ঝিনুককে বলে, তুমি ওই ঘরে যাও আমি বাকি সুটকেস নিয়ে আসছি।

দরজা খোলা রেখেই রিশু নেমে যায় সিঁড়ি দিয়ে। রিশু বেড়িয়ে যেতেই ভীষণ ভাবে একা মনে হয় ওর। একেবারে এক নতুন জগতে ঢুকে পড়েছে ঝিনুক।

চারপাশে ঘাড় ঘুরিয়ে জরিপ করে নেয়, আজ থেকে এটাই ওর গন্ডী এখানেই ওকে থাকতে হবে। বসার ঘরটা বেশ ছোট, একটা মাত্র লম্বা সোফা পাতা

আর সোফার পেছনে একটা প্লাস্টিকের টেবিল আর দুটো চেয়ার পাতা। এক কোনায় একটা ফ্রিজ, একদিকের দেয়ালে একটা টিভি,

পাশে একটা ছোট রান্নাঘর। বসার ঘরের এক পাশে পাশাপাশি দুটো ঘর, মনে হয় ওই দুটো শোয়ার ঘর। একটা ছোট পরিবার থাকার মতন যথেষ্ট।

পুরো ফ্লাটটা দেখে মনে হল কোলকাতায় রিশুদের বাড়ির বসার ঘরটা মনে হয় এর চেয়েও বড়। মনে মনে হেসে ফেলে ঝিনুক, টেবিলে একটা গ্লাসে আধা

খাওয়া জল মনে হয়। চেয়ারে একটা নোংরা জিন্স ঝুলছে, রান্নাঘরের দিকে উঁকি মেরে দেখে সিঙ্কে বাসন পরে রয়েছে, কাজের লোক আছে না নেই,

নাকি এইসব কাজ ওকেই করতে হবে? কিঞ্চিত অস্বস্তি বোধ করে ঝিনুক, ও এখানে কাজের লোক হিসাবে এসেছে নাকি যে রোজ সকালে উঠে রান্না করবে বাসন মাজবে ঘর ঝাড়ু দেবে?

বাড়িতে কাজের লোক ছিল বাড়ির কাজের জন্য, মা রান্না করত, কোনদিন রান্না ঘরে পর্যন্ত ঢোকেনি, হ্যাঁ ম্যাগি চা ডিম সেদ্দ এইসব বানাতে জানে কিন্তু এর বেশি ওর দৌড় নয়।

এক ধাক্কায় ওর সীমানা এত ছোট হয়ে যাবে সেটা বুঝতে পারেনি। দরজা বন্ধ করার শব্দ পেতেই সারা শরীর কেঁপে ওঠে ওর।

গতরাতে বাড়িতে না হয় সবাই ছিল, সেখানে চেঁচালে হয়ত কেউ ওর ডাক শুনে ওকে বাঁচাতে আসত, কিন্তু এই দূর দেশে এই একাকী এক

ফ্লাটের মধ্যে বন্ধ দরজার পেছনে ওর সাথে কি করবে রিশু? রিশুর দিকে তাকিয়ে দেখে, দুটো বড় বড় সুটকেস দুইতলা পর্যন্ত টেনে উঠিয়ে হাপিয়ে গেছে।

রিশু ওর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে রান্নাঘর থেকে একটা জলের বোতল এনে বেশ কয়েক ঢোক জল খেয়ে ওর দিকে জলের বোতল এগিয়ে দেয়। kolkata pasa marar golpo

চারপাশে তাকিয়ে নিজের ঘরের অবস্থা দেখে বেশ বিব্রত বোধ করে। এতদিন বন্ধ থাকার ফলে বেশ নোংরা হয়ে গেছে চারদিক।

বারান্দার দিকের একটা জানালা মনে হয় খোলা ছিল বলে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া ঘরের হাওয়া ঠান্ডা করে দিয়েছে।

একটা বড় শোয়ার ঘরের মধ্যে ঝিনুকের বড় সুটকেস রেখে ওকে বলে, তুমি ফ্রেস হয়ে নাও।বুকের মধ্যে হাপর টানছে ঝিনুকের তাও বাধ্য মেয়ের মতন মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানিয়ে বলে, হ্যাঁ যাচ্ছি।

চোখ ঘুরিয়ে রিশুকে দেখে ঝিনুক, শোয়ার ঘরের বিছানাটা বেশ বড় তার পাশের ঘরে একটা ছোট খাট আর একটা চেয়ার। নিজের ছোট সুটকেস নিয়ে বড়

শোয়ার ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে ঝিনুক। ঠিক সেই সময়ে ঝিনুকের ফোন বেজে ওঠে। ফোন তুলে দেখে ওর মা ফোন করেছে।

মেয়ে ঠিক ভাবে বাড়িতে পৌছাল কি না সেটা সব বাবা মায়ের বড় চিন্তার বিষয়। ফোন তুলে উত্তর দেয় ঝিনুক, হ্যাঁ মা, বাড়ি পৌঁছে গেছি ভালো ভাবে।

ওর মা ওকে বলে, সাবধানে থাকিস। এবারে বুঝে শুনে সব কিছু মানিয়ে চলিস। বুঝতেই পারছিস…কথাটা শেষ করতে দেয় না ঝিনুক,

কি বুঝবো একবার বলবে?পিয়ালী তাও মেয়েকে শান্ত হওয়ার জন্য বলে, দ্যাখ বড় হয়েছিস, বিয়ে হয়ে গেছে কচি খুকি নয় তুই। রিশু তোর থেকে বয়সে অনেক বড়

একটু মান সন্মান রেখে চলিস। যে অবস্থায় বিয়ে হয়েছে তাতে তোকে এইসব মানিয়ে নিয়েই চলতে…শেষ বাক্য কানে যেতেই ঝাঁঝিয়ে ওঠে ঝিনুক,

হ্যাঁ, সব কিছু ত আমাকেই মানিয়ে নিতে হবে। আমি এখানে দোষী আমি খারাপ।পিয়ালী মেয়েকে বলে, তুই দোষী না খারাপ সেটা তোকে বলিনি,

একটা নতুন জীবন শুরু করতে গেলে অনেক কিছুই মানিয়ে নিতে হয়। তোর জেদ…চেঁচিয়ে ওঠে ঝিনুক, হ্যাঁ সারা জীবন আমার জেদ,

আমার খামখেয়ালিপনাই এইসব দেখে গেলে তোমরা। কি মানিয়ে নেব? সকাল থেকে প্রায় একশো বার কানের কাছে এক কথা ঘ্যানর ঘ্যানর করে চলেছ,

মানিয়ে নিবি মানিয়ে নিবি, ওর সামনে জেদ করবি না, ও যা বলবে শুনবি, ওর সাথে ঝগড়া করবি না। কেউকি ওকে একবার ও বলেছে আমার সাথে মানিয়ে নিতে?

কেউ কি ওকে একবারের জন্য বলেছে আমার কি চাই না চাই সেটা বুঝতে? নাহ, যেহেতু সব দোষ আমার সুতরাং সব কিছু চুপচাপ আমাকেই মেনে নিতে…

দরজার দিকে চোখ যেতেই থমকে যায় ঝিনুক, রিশু ওর দিকে নিস্পলক চোখে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে। মায়ের কথা শুনে রিশুর দিকে দেখে একদম সহ্য হয় না ওর,

রাগে দুঃখে চরম ঘৃণায় সর্বাঙ্গ রিরি করে জ্বলে ওঠে। দড়াম করে রিশুর মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে দেয় ঝিনুক।

রাতের নিস্তব্ধতা খানখান করে হটাত করে এইভাবে ঝিনুককের আচরনে ভীষণ আহত হয় রিশু। চোয়াল কঠিন হয়ে যায় ক্রোধে, কারুর ওপরে এইভাবে চেঁচিয়ে কথা

বলা রিশুর একদম পছন্দ নয়। হাত মুঠো করে নিজের আবেগ আয়ত্তে নিয়ে আসে। ছোট বেলা থেকে ওর মা ওকে শিখিয়েছে, রাগ করবে না,

রেগে মেগে কোনদিন কোন সমস্যার সমাধান হয় না। বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে সেই সমস্যার আসল কারন খুঁজে তার বিহিত করবে।

ডাক্তারি পড়ার সময় থেকেই ওর মা ওকে বলেছিল যে এরপর ডাক্তার হবে, চোখের সামনে প্রচুর রুগী দেখবে, তাদের দুঃখ কষ্ট শুনে যেন ভাবাবেগে বয়ে না যায়

তাহলে অপারেশান করার সময়ে হাত কাঁপবে সুস্থ ভাবে বাড়ি ফিরে ঘুমাতে পারবে না। সেই জন্য মায়ের কথা মেনে রোজদিন প্রাণায়াম করে রিশু,

ভাবাবেগকে আয়ত্তে রাখার জন্য রোজদিন অন্তত আধ ঘন্টা চোখ বন্ধ করে ধ্যান করে। কিন্তু পাশের ঘরে মেয়েটা যে ওর রোগী নয়, কচি একটা মেয়ে, সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী।

ছোট ঘরের মধ্যে ঢুকে বেশ কিছুক্ষন চুপচাপ খাটের ওপরে বসে থাকে আর ভাবে একবার মাকে ফোন করবে। ভীষণ কান্না পায় ওর, কিন্তু ওর চোখে জল দেখলে

ওর মা থাকতে পারবে না, নিজেকে দোষী ভেবে নেবে আর নিজেকে কষ্ট দেবে, মায়ের সেই কষ্ট দেখতে চায় না রিশু। কি ভাবে ছোটবেলা থেকে ওকে

বুকের মাঝে আঁকরে ধরে মানুষ করেছে সেটা ওর অজানা নয়।ওর কাপড় জামা সব কিছুই পাশের ঘরের আলমারিতে।

মা ভাই বোন এলে তবেই এই ঘরে শোয়া হয় না হলে এটা ওর পড়ার ঘর। জুতো খুলে বাথরুমে ঢুকে পরিষ্কার হয়ে

নেয়। পাশের ঘরের বন্ধ দরজায় কান পাততে একদম ইচ্ছে করে না। যা খুশি করছে করুক, বাকি জীবন না হয় এই বিশাল রঙমঞ্চে মেকি হাসি নিয়ে কাটিয়ে দেবে।

Leave a Comment